ত্বক ও চুলের যত্নে ভেষজ উপাদানের জুড়ি নেই। কারণ প্রাকৃতিক অনেক জিনিসই শরীরকে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিকভাবে সুরক্ষিত রাখে। ত্বক ও চুল শরীরের অন্যতম অংশ, যার সঠিক যত্নের ওপরই নির্ভর করে এর সুস্বাস্থ্য। ভেষজ ও প্রাকৃতিক উপাদানে ত্বক ও চুলের যতœ নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন হারমোনি স্পার রূপ বিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা রীতা।
রাহিমা সুলতানা বলেন, ত্বক ও চুলের যতেœ একটা রুটিন অনুসরণ করা ভালো। আর এখন করোনার সময়, পার্লারে যাওয়ার খুব একটা সুযোগও নেই। তাই ঘরে বসেই হোক নিজের যতœ। বর্ষাকাল পুরোপুরি যায়নি। এ সময়ে ত্বকে ফাঙ্গাল ইনফেকশনের আশঙ্কা থাকে। সেই সঙ্গে চুলও হয়ে যায় চিটচিটে ও জরাজীর্ণ। তাই প্রাকৃতিক কিছু টিপস অনুসরণ করতে হবে ত্বক ও চুলের সুরক্ষায়।
ত্বকের যতেœ : বর্ষা মৌসুমে যেমন বৃষ্টি থাকে, তেমনি থাকে প্রচ- গরম। এতে ত্বকে ময়লা জমে নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই প্রাকৃতিক ভেষজ উপাদানে যতœ নিন ত্বকের। এতে কেমিক্যালের ভয় নেই। ত্বকের সঙ্গে মানিয়ে গেলেই হলো। যার ত্বকের জন্য যে প্যাক উপযোগী, তিনি সেটি ব্যবহার করেই যতœ নিতে পারেন অনায়াসেই।
নিমপাতার ঔষধি গুণ : নিমপাতা ত্বকের জন্য ঔষধি গুণের কাজ করে। নিমপাতা, টক দই ও কাঁচা হলুদ মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে এটি সারা শরীরে লাগাতে পারেন। ২০-২৫ মিনিট পর ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি ত্বককে ভেতর থেকে সুরক্ষা দেয়।
মধুতে কোমল ত্বক : মধু, কাঠবাদাম আর দুধের প্যাক খুব কার্যকর। এ তিনটি উপাদান মিশিয়ে পুরো শরীরে লাগালে স্ক্রাবিংয়ের কাজ করে। এটি ত্বকের মরা কোষ দূর করার পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
শসায় সতেজ : বাজারে শসা প্রায় সব সময় পাওয়া যায়। শসা ও আলু ব্লেন্ড করে সঙ্গে মধু মিশিয়ে মুখে লাগাতে পারেন। এতে ত্বকের মলিন ভাব দূর হবে এবং জেল্লা বাড়বে। ত্বকে অনাকাক্সিক্ষত কালো ছোপ থাকলে সেটিও দূর হয়ে যাবে।
দাগ দূর করতে পেঁপে : ত্বকের জন্য পাকা পেঁপে খুবই উপকারী। পাকা পেঁপে পেস্ট করে সঙ্গে দুধের সর মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখতে পারেন। ত্বকের যে কোনো দাগ দূর করে এই প্যাক। তবে পেঁপে অ্যালার্জির কারণ হতে পারে অনেকের, সে ক্ষেত্রে এটি এড়িয়ে যাবেন।
বাদামে ময়েশ্চার : শুধু কাঠবাদাম ও দুধ মুখের ত্বকের জেল্লা বাড়াতে খুবই উপকারী। কাঠবাদাম ব্লেন্ড করে দুধ মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। সপ্তাহে দুদিন এ প্যাকটি লাগাতে পারেন। ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের শুষ্কতাও দূর হবে এবং ত্বক নরম থাকবে। শুষ্ক ত্বকের জন্য এ প্যাক খুব ভালো ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে।
তৈলাক্ত ত্বকে লেবু : ত্বক তৈলাক্ত হলে লেবুর রসের সঙ্গে সামান্য পানি মিশিয়ে ত্বকে লাগান। যদি শরীরের কোনো অংশে কালো দাগ থাকে, তা হলে প্রতিদিন জায়গাটি লেবু দিয়ে ঘষবেন। ঠোঁট কালো থাকলে নিয়মিত কাঁচা দুধের সঙ্গে লেবুর রস তুলা ভিজিয়ে মাসাজ করলে কালো ভাব চলে যাবে।
চুলের যতেœ : চুলের নানা সমস্যার মধ্যে খুশকি, চুলের আগা ফেটে যাওয়া, তেল চিটচিটে ভাব আরও কত কী! তবে এই গরমে ঘেমে চুলে চিটচিটে ভাব বেশি দেখা দেয়। ফলে মাথার ত্বকে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ জন্য চুলের যতেœর রয়েছে ঘরোয়া প্রাকৃতিক কিছু টিপস। জেনে নেওয়া যাক কী কী উপায়ে সমস্যাগুলো দূর করা যায়Ñ
অ্যালোভেরায় নরম চুল : অ্যালোভেরা চুলকে কোমল রাখতে ও চুলের আগা ফাটা রোধে খুবই উপকারী। অ্যালোভেরা থেকে জেলটা বের করে ব্লেন্ড করে মাথার স্কাল্পসহ পুরো চুলে লাগিয়ে নিন। ২০-৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
তেলে চুল তাজা : নারিকেল তেল গরম করে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত লাগিয়ে ১ ঘণ্টা রেখে শ্যাম্পু করুন। তার পর সাধারণ তাপমাত্রার পানি দিয়ে শ্যাম্পু করে কন্ডিশনিং করুন। তবে তেল দিয়ে কোনো প্যাক লাগানোর আগে গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে মাথা পেঁচিয়ে রাখুন। এতে হেয়ার ফলিকল খুলে যায় এবং প্যাকের উপকারী জলীয় অংশ সহজেই চুলের গোড়ায় ঢুকতে পারে।
মেথিতে সিল্কি : মেথির গুঁড়া, ডিম, টক দই ও লেবুর রস মিশিয়ে মাথায় লাগিয়ে রাখুন ৩০-৩৫ মিনিট। মেথি যেমন চুলকে সিল্কি ও উজ্জ্বল করে তুলবে পাশাপাশি ডিম চুলে প্রোটিন জোগান দেবে। টক দই ও লেবুর রস চুলের তৈলাক্ত ভাব থাকলে সেটি দূর করবে।
হট টাওয়েল ট্রিটমেন্ট : শ্যাম্পু করার আগে শুধু হট টাওয়েল ট্রিটমেন্ট নিতে পারেন। কুসুম গরম পানিতে টাওয়েল ভিজিয়ে সেটি দিয়ে মাথা পেঁচিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। তার পর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
* প্রচুর পরিমাণে প্রোটিনযুক্ত খাবার খান। প্রচুর পানি পান করুন। সেই সঙ্গে মৌসুমি ফল তো খাবেনই।
Leave a Reply